নিজস্ব প্রতিবেদক:
পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধে নতুন করে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের পূর্বনাওডোবা জিরো পয়েন্ট এর মাঝিকান্দি এলাকার পদ্মা সেতু রক্ষার মূল বাঁধ। শনিবার(৭ জুন) ভোরে অন্তত ২৫০ মিটারের মতো বাঁধের অংশ নদীতে ধসে পড়ে। ভাঙনের কারণে বাঁধের পাশের বসবাসরত দেলোয়ার হোসেন মাদবর, হাদি শেখ ও রুবেল খান নামে ৩ জনের বসতবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুটি দোকানও সরিয়ে নেওয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর এলাকায় বালুচর গড়ে ওঠা এবং বাঁধের নিকটবর্তী স্থানে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্ষায় পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতাও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে, জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা জিরোপয়েন্ট এলাকায় রক্ষাবাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়। তবে শরীয়তপুর পাউবো তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত কাজ শুরু করতে পারেনি। চার মাস পর, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে প্রায় ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে মেরামত কাজ শুরু করে। ওই সময় বাধ মেরামত প্রকল্প পরিদর্শন করতে আসলে, ভাঙনের বিষয়টি জানার পরেও দ্রুত কাজ শুরু না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে, তখন এ বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে পারেননি শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।
এছাড়া, ভাঙনের আশেপাশের অন্যান্য স্থানও ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায়, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে পাউবো। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প অনুমোদন পেলে এই বর্ষার শেষে শুষ্ক মৌসুমে মূলবাঁধ রক্ষা কাজ শুরু হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় ভাঙনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারেক হাসান জানান, "প্রায় ১২-১৩ বছর আগে সেতু বিভাগ পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষার জন্য এই বাঁধ নির্মাণ করেছিল। বর্তমানে জাজিরার নাওডোবা জিরোপয়েন্ট এলাকায় ১০০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ায় পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) যৌথভাবে সমীক্ষা চালায়। তাতে দেখা গেছে, প্রায় ১ কিলোমিটার অংশে বাঁধের নিকটে নদীর গভীরতা বেড়েছে এবং তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাকি ১ কিলোমিটার অংশেও নদী বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে এবং মাটির ক্ষয় অব্যাহত রয়েছে। ফলে পুরো বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।"
তিনি আরও জানান, শনিবার উজান এবং ভাটি মিলিয়ে আনুমানিক ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। এই মুহূর্তে শ্রমিকরা ঈদের ছুটিতে রয়েছে। শিঘ্রই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাঁধটি রক্ষার জন্য দু-এক দিনের মধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করবে।’ বাঁধ মজবুতকরণের জন্য একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাঁধটি মজবুত করা না হলে, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৫০০ মিটারের মধ্যে থাকা সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি ও সাত্তার মাদবর বাজারসহ অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে।
এদিকে নদীভাঙনের কারণে বাঁধের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকশো বসতবাড়ি এখন ভাঙনের হুমকিতে।