বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ধস, পরিদর্শন করেছেন সরকারের দুই উপদেষ্টা

জিহাদ হাসান:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার রক্ষা বাঁধের প্রায় ২৫০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে পদ্মা নদীতে। এতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার তিনটি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার নদীভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। ইতোমধ্যে আতঙ্কে ১৩টি বসতঘর ও দুটি দোকান অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন স্থানীয়রা। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির।

ভাঙন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও মোহাম্মদ ফাওজুল কবির।

উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরাও চাই এখানে একটি স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ হোক। পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে কাজ করছে। মানুষের ভিটেমাটি নদীতে চলে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত হাইড্রোলজিক্যাল স্টাডি ও ওয়াটার মডেলিং করে পরিকল্পনা নেওয়া হবে। 

এ সময় উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির বলেন,
নদীশাসন অত্যন্ত জটিল কাজ। গত ১০ বছরে পদ্মার পানি ও স্রোতের গতি-প্রবাহ বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু বালু ফেলে সমস্যার সমাধান হবে না। মূলত নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং অবৈধভাবে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলনই ভাঙনের বড় কারণ। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শুধু শ্রমিক নয়, ড্রেজার ও ড্রেজারগুলোর মূল মালিকদের আটকাতে হবে এবং বালুখেকোদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে হলেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জনস্বার্থবিরোধীভাবে কেউ যদি ড্রেজিংয়ের অনুমোদন দিয়ে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা এই ইস্যুকে নিয়মিত ফলোআপে রাখব এবং জনমত গড়ে তুলে অবৈধ বালু তোলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এ সময় দুই উপদেষ্টাদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক এনায়েত উল্লাহ, প্রধান প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন, পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর পূর্ব দিকে, প্রায় ১৪ বছর আগে সেতুর ভাটির দিকে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের প্রকল্প এলাকা রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে সেটির সঙ্গে যুক্ত করা হয় নদীশাসনের বাঁধ। গত বছর নভেম্বর মাসে প্রথমবার নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধের ১০০ মিটার ধসে পড়ে। চলতি বছরের ৮ জুন সকালে বাঁধের আরও প্রায় ১৫০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়ে। বাঁধ ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি এবং ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে আলম খার কান্দি গ্রামের অন্তত ১৫ জন তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রবিন বেপারী একসময় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এলাকায় বসবাস করতেন। ২০২০ সালে ভাঙনে তার বাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। পরে আশ্রয় নেন জাজিরার আলম খার কান্দিতে। এখন সেখানেও ভাঙনের মুখে। তিনি বলেন, ‘পদ্মা আমাদের একবার নিঃস্ব করেছে, এবার দ্বিতীয়বার। বাঁধ দেখে এখানে একটু নিরাপদ মনে হয়েছিল, এখন সেটাও ভাঙছে। জানি না এবার কোথায় যাব। শুধু জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন সাময়িকভাবে ঠেকানো সম্ভব হলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নদীশাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি। আমরা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘‘বাঁধের কিছু অংশে সংস্কার চলছিল। নদীতে পানি ও স্রোতের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।’’

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post