জিহাদ হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক:
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় ফসলি জমি এখন মাছের ঘেরে পরিণত করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি কেটে তৈরি করা হচ্ছে অবৈধ মাছের ঘের। শ্রেণী পরিবর্তন কিংবা সংশ্লিষ্ট আইনের তোয়াক্কা না করেই প্রভাবশালী ব্যক্তি ও চক্রগুলো মাছ চাষের নামে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি দখল করে নিচ্ছে। আর এসবের পেছনে প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা প্রশ্ন তুলছে জনমনে। এতে যেমন হুমকির মুখে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা, তেমনি পরিবেশগত ভারসাম্যও বিঘ্নিত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সিড্যা ইউনিয়নের আনিস মুন্সির মোড় নান্নু বেপারির বাড়ীর পিছনে, ধানোকাঠী ইউনিয়নের
চর মালগাঁও ভাদুরি কান্দি হাসেম হাওলাদারের বাড়ীর পাশে, পূর্ব ডামুড্যা ও ইসলামপুর ইউনিয়নের গঙ্গেসকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কয়েকশো বিঘা ফসলি জমি এখন মাছ চাষের আওতায়। পানি ধরে রাখতে জমির উপরিভাগ কেটে গভীর পুকুরে রূপান্তর করা হয়েছে। অথচ ভূমি সংরক্ষণ আইন ২০০১ অনুযায়ী, কৃষি জমির ব্যবহার পরিবর্তন করতে হলে সরকারের অনুমতি বাধ্যতামূলক। তবে এসব ঘের নির্মাণে নেই কোনো অনুমোদন বা পরিবেশ ছাড়পত্র।
সিড্যা এলাকার স্থানীয় কৃষক আবদুল মালেক বলেন, "আমার পাশের জমিতে এক প্রভাবশালী নেতা ঘের করেছে। এতে আমাদের বেশকিছু জমির পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামী মৌসুমে ধান রোপণ করা সম্ভব হবে না।"
ধানোকাঠী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবু কালাম বলেন, ‘আমি আমার জমিটায় ধান, পাট ও মরিচ চাষ কইরা সংসার চালাই। এই জমির পাশেই তাঁরা মাছের ঘের কাটতেছে। দুদিন পরে পানি আটকে যাবে তখন কি করবো। আমরা কৃষি কাজ না করতে পারলে কীভাবে বাঁচমু।’
কবির হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, তারা রাতের আধারে জমিগুলারে দখলে নিয়ে মাটি কাটতেছে। বাধা দিলেও শুনে না। ঘেরের মাঝখানে কিছু মানুষের জমি দখল নিয়েছে। আর মাটি কেটে বাঁধ দেওয়ার ফলে অন্যসব জমিগুলায় বৃষ্টির পানি জমে যাবে। আমরা ধারদেনা কইরা ফসল করি। এখন জমিগুলাতে আর ফসল ফলানো যাবে না।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল। প্রশাসনের নীরবতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের সমন্বয়ে এই বেআইনি কার্যক্রম যেন দিনের পর দিন বৈধতা পাচ্ছে। যা শুধু আইন ভঙ্গ নয়, কৃষির ভবিষ্যতের জন্য বড় আশঙ্কার বার্তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি জমি রক্ষা না হলে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট অনিবার্য। এক সময়কার সবুজ ধানক্ষেত মাছের ঘেরে পরিণত হলে দেশীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
স্থানীয় কৃষিবিদ মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, “শরীয়তপুরের মাটি অত্যন্ত উর্বর। এখানে ধান, পাট, আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হয়। কৃষি জমি নষ্ট হয়ে গেলে শুধু খাদ্য সংকটই নয়, পরিবেশগত বিপর্যয়ও আসবে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।”
উপজেলা কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "আমরাও বিষয়টি জানি, তবে 'উপরে' নির্দেশ না আসলে কিছু করতে পারি না।"
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার(ভারপ্রাপ্ত) মো: আব্দুল মালেক বলেন, "বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।