বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

হাসপাতালে নারী দালাল চক্রের হামলার শিকার সমকালের সাংবাদিক


স্টাফ রিপোর্টার : মো. জিহাদ হাসান


শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য ও অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সমকাল পত্রিকার সাংবাদিক সোহাগ খান সুজনের ওপর হামলা চালিয়েছেন নারী দালালরা। সোমবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।


এর আগে, গত ৮ মে সমকাল পত্রিকায় “সহকারীরাই রোগী ভাগান ক্লিনিকে” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে সক্রিয় দালালচক্রের নানা অপকর্মের চিত্র উঠে আসে।


সোমবার সকালে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যাওয়ার পথে সুজন দেখতে পান, আগের মতোই নারী দালালরা রোগীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন নিম্নমানের ক্লিনিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি ঘটনাটি আবারও ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে, হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে থাকা অন্তত পাঁচজন নারী দালাল তার ওপর চড়াও হন।


সাক্ষ্য হিসেবে ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শরীয়তপুরের সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল হোসেন তার ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশ করেন, যা পরে দ্য ডেইলি স্টার-এর হাতে আসে।


ভিডিওতে ডেইলি স্টারের বরাতে জানা যায়, কালো বোরখা ও নীল হিজাব পরিহিত এক নারী সুজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং কয়েকবার তার গায়ে হাত তোলেন। সময় ওই নারী সুজনের সার্টের কলার চেপে ধরেন এবং বুকে ঘুষি মারেন।  অন্য নারীরাও তাকে ঘিরে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। এক পর্যায়ে নারীরা বলেন, “হাসপাতালে আমাদের ডিস্টার্ব করেন কেন।” দালালরা নারী হওয়ায় সুজন বারবার পিছু হটলেও তাদের শান্ত করতে চেষ্টা করেন।


ঘটনার সময় কয়েকজন পথচারী এগিয়ে এসে সুজনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “এরা হাসপাতালের দালাল পেশায় জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আমাকে হেনস্তা ও ধাক্কাধাক্কি করছে এবং গায়ে হাত তুলেছে।”


হামলাকারী নারী দালালদের মধ্যে মনি মুক্তা, হালিমা বেগম, কেয়া বেগম ও নাছিমা বেগমের নাম পাওয়া গেছে।


দৈনিক সমকালের সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন বলেন, “সকাল ১১টায় সিভিল সার্জন অফিসে ব্যক্তিগত কাজে যাওয়ার সময় সদর হাসপাতালের সামনে নারী দালালদের আবারও সক্রিয় দেখতে পাই। প্রতিবেদন প্রকাশের পরও তাদের দালাল কার্যক্রম চলতে দেখে আমি ভিডিও করছিলাম। তখন তারা আমার মোবাইল কেড়ে নেয়, হেনস্তা করে এবং জোর করে ক্লিনিকে নিতে চায়। পরে স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে তারা সরে যায়।”


এ বিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “সমকালের সাংবাদিক সুজনকে হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ মৌখিকভাবে পেয়েছি। ভিডিও ফুটেজও দেখেছি। তাকে পালং মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


তিনি আরও বলেন, “আমরা হাসপাতাল থেকে দালালদের একটি তালিকা পেয়েছি। যারা রোগীদের হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশে বাধা দিয়ে জোর করে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তালিকার ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ডিবি ও পালং মডেল থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি সহযোগিতা চায়, মামলা করে, তাহলে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।”


ঘটনার পর দুপুরে অভিযুক্ত নারী দালালদের বক্তব্য নিতে সাংবাদিকরা সদর হাসপাতালসহ শহরের চার-পাঁচটি বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে তাদের খুঁজে পাননি। বিকালে পালং মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে হালিমা বেগমকে পাওয়া গেলেও সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া মাত্র তিনি পালিয়ে যান।

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post