বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

ভেদরগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বাড়ীতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ

জিহাদ হাসান, শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধের জের ধরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় একটি বাড়ি আংশিকভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিপক্ষ জমিসহ বাড়ীটি দখলেরও চেষ্টা করেছে।

ঘটনাটি গত শনিবার(৩ মে) সকালে উপজেলার সখিপুর থানার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের কালা মিয়া সরকার কান্দি এলাকায় ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী মালেক প্রধানীয়া গতকাল শুক্রবার রাতে সখিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ওই ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার তারাবুনিয়া কালা মিয়া সরকার কান্দি এলাকার আ: রহমান প্রধানীয়ার (৬০) তার ছেলে জাকির হোসেন প্রধানীয়া (৪০),আবুল কালাম প্রধানীয়া (২০) সহ অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজন।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, মালেক প্রধানীয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো প্রতিবেশী আ: রহমান প্রধানীয়ার। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিক বার মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। এ নিয়ে শনিবার স্থানীয় সালিসির মাধ্যমে জমিটি মাপার কথা থাকলেও রহমান প্রধানীয়া জমিটি নিজের দাবি করে মাপতে রাজি হয়নি। পরে বিষয়টি নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মালেক প্রধানীয়ার বাড়ীতে হামলা চালায় রহমান প্রধানীয়া সহ তার ছেলেরা। হামলায় ঘরের বেড়া সীমানা প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি বাড়ীটি ভাংচুর করে জমি দখলের চেষ্টাও করা হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে দুপক্ষকেই শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।  এর আগে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালেক প্রধানীয়া, স্ত্রী নাসিমা বেগম ও কলেজ পড়ুয়া মেয়ের উপর হামলা চালায় অভিযুক্তরা। এসময় মালেক প্রধানীয়া গুরুতর আহত হলে তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়। হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘবদ্ধভাবে আসে। তারা হামলার সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং স্থানীয়দের কেউ এগিয়ে এলে তাকেও হুমকি দেয়। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় অভিযোগ করলেও বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী পরিবারটি।

মানুন সরকার নামে স্থানীয় একজন বলেন, জমিজমা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছে। এ নিয়ে দু’মাস আগে মারামারির ঘটনা ঘটেছে তখন এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা তাদের মিলিয়ে দিয়েছিলাম। এবারও আমরা স্থানীয়ভাবে চেষ্টা করেছিলাম মিমাংসা করার কিন্তু জাকির প্রধানীয়া মানতে চায় না। গত শনিবার আমাদের বসার কথা ছিলো একটু ঝামেলার কারণে বসতে পারি নি। এরপর সময় বাড়িয়ে বিষয়টি মিমাংসা করার কথা থাকলেও হঠাৎ শুনলাম জাকির সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিয়ে এসেছে। জাকিরের চাচা আফজাল সেনাবাহিনীতে চাকুরী করে তাই হয়তো নিয়ে এসেছে। বিষয়টি জাকিরকে জিগ্যেস করলাম সেনাবাহিনী আনার কারণ জাকির বললো আমাদের জমি উদ্ধার করার জন্য এনেছি। এখন সেনাবাহিনী যেহেতু এসেছে আইনের মাধ্যমে সমোঝোতা হবে। আমরা স্থানীয়ভাবে তাদের দুপক্ষই ভালো থাকুক এটাই চাই।

ভুক্তভোগী আ: মালেক প্রধানীয়া বলেন, “ তাদের সাথে আমাদের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছে। আমি স্থানীয়ভাবে অনেকবার বসার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা কাগজপত্র নিয়ে আসে না। ঘটনার দিন স্থানীয় সালিশির মাধ্যমে আমাদের জমি মাপার কথা। কিন্তু জাকির প্রধানীয়া জমি না মেপে আমাদের পুরো জমি দখল করতে চায়। এসময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ উপস্থিত হয়। তারা দু'পক্ষের কথা শুনে চলে যায়। এরপরই আমাদের মারার হুমকি দিয়ে জমি ছাড়তে বলে। আমরা জমি ছাড়তে চাইনি বলে তারা ৮-১০ জনের একটি দল নিয়ে আমাদের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। ঘরের টিন ও বেড়া ভাঙচুর করে এবং বাড়ীতে থাকা নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আমরা বাধা দিলে আমাদের মারধর করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “তারা বলেছে এই জমি তারা দখল করবে। রহমানের ভাই আফজাল সেনাবাহিনীর চাকরি করে। আমাদের সেনাবাহিনীর ভয় দেখায়।  আমরা এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। থানায় অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এর আগেও আমাদের উপর হামলা করেছে বিচার পাই নি। তার ভাই সেনাবাহিনীর চাকরি করে তাই আমরা ভয়ে কিছু বলি না। আমরা ন্যায় বিচার চাই”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জাকির প্রধানীয়া দাবি করেন, “এই জমির মালিক আমরা। কাগজপত্র আমাদের পক্ষে আছে। সকালে সেনাবাহিনী, পুলিশ এসেছিলো তারা দেখে গেছে। আমরা কারো ওপর হামলা অথবা ভাঙচুর করিনি।”

এ বিষয়ে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)  মো. ওবায়দুল হক বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়েছি। ভুক্তভোগী পরিবার  লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post