বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

পদ্মার ভাঙনে বিদ্যালয় ভবন বিলীন, পাঠদান করা হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে

একটি টিনের চালার নিচে পাঠদান করা হচ্ছে। ছবি: ছগির হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সারা বছর অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে উত্তাল পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে আসতে হয় স্কুলে। স্বস্তি নেই সেখানেও। স্কুলটির নিজস্ব কোনো ভবন না থাকায় খোলা আকাশের নিচে ও একটি টিনশেডের নিচে চলে পাঠদান কার্যক্রম। মাসখানেক আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পদ্মার বুকে বিলীন হয়েছে। ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছিলেন দুজন শিক্ষক। কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তি তো আছেই, এর ওপর একসঙ্গে তিন শ্রেণির পাঠদান চলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ কারও কথা ঠিকভাবে শুনতে পারছিল না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে ৫২নং পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। গত ৫ অক্টোবর সকালে একই ইউনিয়নের নদীর অপর প্রান্তে আহাম্মেদ মাঝি কান্দি এলাকায় অবস্থিত স্কুল ভবনটি নদী ভাঙন কবলিত হয়ে বিলীন হয়ে যায়।
খোলা আকাশের নিচে টুল ও টেবিল বসিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। ছবি: ছগির হোসেন
এরপর থেকেই পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই এখন শ্রেণিকক্ষ ব্যতিত বাইরে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। বৃষ্টি বা রোদ হলে স্থানীয় একটি মাদরাসার রান্না ঘরের ঝাপের নিচে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নেয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয় বিদ্যালয়টি । প্রতিষ্ঠার পর থেকে টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা মেঝের ঘরে চলছিল পাঠদানের কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের একটি ভবনে ছিল পাঁচটি কক্ষ। পাঁচ কক্ষের ভবনটি গত ৫ অক্টোবর নদী গর্বে বিলীন হয়।

বিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ১৯৭০ সালে জাজিরার পদ্মাতীরবর্তী নাওডোবা পাইনপাড়া এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন পাইনপাড়া এলাকাটি পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরে ছিল। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে এলাকাটি এখন পদ্মা নদীর মাঝামাঝি স্থানে একটি চরে রূপান্তরিত হয়েছে।
খোলা আকাশের নিচের টুল ও টেবিল বসিয়ে পাঠদান করছেন বিদ্যালয়টির প্রদান শিক্ষক। ছবি: ছগির হোসেন
পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রথমবার ভাঙনের কবলে পড়ে ১৯৯৫ সালে। দ্বিতীয় দফায় ২০০৭ সালে ভাঙনের কারণে এটির জমি ও অবকাঠামো নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২০১৩ সালে চরপাইনপাড়ায় ৩৩ শতাংশ জমির ওপর ৫টি কক্ষ নির্মাণ করে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়।

গত বর্ষায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে প্রথমে বিদ্যালয়ের মাঠটি বিলীন হয়। এরপর ৫ অক্টোবর বিদ্যালয়টির টিনশেড ঘর ভাঙনের কবলে পড়লে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই সময় নদীর দক্ষিণ তীরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের একটি খালি জমিতে বিদ্যালয়ের জিনিস ও আসবাবপত্র স্তূপ করে রাখা হয়। এ সময় টানা ১০ দিন বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী  নিশাদুল রায়হানা ও চতুর্থ শ্রেণির সামিয়া আক্তার বলে, আমাদের স্কুল ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাই নদী পাড় হয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। রোদ ও বৃষ্টি হলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

বিদ্যালয়টির অবকাঠামো না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে বেগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মিয়া। তিনি বলেন, "বিদ্যালয়টি নেই, ভাবতে পারছি না। সামনে শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা। এই বিবেচনায় খোলা আকাশের নিচে শ্রেণির কার্যক্রম চালাচ্ছি। স্কুলটা কোথায় নিয়ে চালু করা হবে, কে আমাদের জমি দিবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের স্কুলটির অবস্থা জানিয়েছি। তাঁরা আসেননি আর এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও দিতে পারেননি।"

বিদ্যালয়টি পরিদর্শন না করার বিষয়ে অকপটে স্বীকার করেন জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়ামত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, একটি স্কুল নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। সেটি দেখতে যেতে পারিনি। স্কুলটির শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ কি না, তা–ও বলতে পারব না।’

সার্বিক বিষয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, "আমি জাজিরায় যোগদান করেছি দুই সপ্তাহ হলো। বিদ্যালয়ের বিষয়টি আমি আপনাদের(সাংবাদিকদের) মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি উপজেলা শিক্ষা অফিস হতে ভাঙনের পরপরই বিদ্যালয়টি পুনর্বাসনের জন্য জরুরী বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। আমিও মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জানবো। যদি দ্রুত কোন বরাদ্দ না আসে তবে আপাতত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে কিছু একটা ব্যবস্থা করবো।"

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post