নিজস্ব প্রতিবেদক:
শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের আড়াচন্ডী এলাকায় বাড়ীতে মুরগী যাওয়া নিয়ে বিরোধের জেরে নজরুল মাদবর(৪৫) নামে একজনের নিহতের ঘটনায় অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবীতে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।
রবিবার(২৪ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় জাজিরার আড়াচন্ডী এলাকায় ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়কের পাশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে নিহতের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীসহ অন্তত ২ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা দাবী করেন, হত্যাকাণ্ডের ১০দিন পার হয়ে গেলেও নজরুল ইসলামের হত্যাকারীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। প্রায় দুইঘন্টা সড়কে অবস্থান শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানিয়ে মানববন্ধনটি শেষ করা হয়।
নিহতের স্ত্রী কল্পনা আক্তার বলেন, "তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু এতোদিনেও খুনিদের একজনকেও ধরতে পারলোনা পুলিশ। এমন হলে আমরা কার কাছে বিচার চাইবো? আমি আমার স্বামীর হত্যাকারী প্রত্যেকের ফাঁসি চাই।"
নিহত নজরুল ইসলামের বাবা লতিফ মাদবর ঘটনার দিন ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। সাথে তার ছোট ছেলে সুমনও গুরুতর আহত হোন। ছোট ছেলে সুমন মাদবর এখনোও ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর লতিফ মাদবর জাজিরা হাসপাতালে। ছেলের খুনিদের পুলিশ ধরছে না। তাই হাসপাতাল থেকে সরাসরি মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছেন। সেখানে দেখা যায়, দুজন স্বজনের কাঁধেচেপে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছেন আর বলছেন, "আমার জীবনে আর কোন চাওয়া নাই। শুধু আমার পোলার খুনিগো ফাঁসি দেখে মরতে চাই। আপনেরা আমার পোলার খুঁনিগো ধরেন।"
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় বাসিন্দা জলিল সরদার বলেন, 'নজরুল খুব শান্ত প্রকৃতির লোক ছিল। ওর একটি ৫ বছর বয়সী ছেলে আছে। এখন এই ছেলেটিকে দেখার আর কেউ রইলো না। নজরুল ওর পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক ছিল। আমরা এলাকাবাসী নজরুলের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।'
এ বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আল-আমিন বলেন, "আসামীদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করি শিঘ্রই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।"
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর নজরুল মাদবরের বাড়ির মুরগীর বাচ্চা প্রতিবেশী বোরহান মাদবরের বাড়িতে ঢুকে যাওয়ায় দুই পরিবারের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। ঐসময় বোরহান মাদবরের সাথে স্থানীয় আবু সালাম মাদবর, জলিল মাদবর, রাজন মাদবর ও মনু মাদবর ধারালো অস্ত্র নিয়ে নজরুল মাদবরের উপর হামলা চালায়, এসময় তার পিতা লতিফ মাদবর ও ভাই সুমন মাদবর ছাড়াতে গেলে নজরুলসহ তার পিতা ও ভাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নজরুল মাদবর ও সুমন মাদবরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের দুই ভাইকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করা হয় এবং তাদের পিতা লতিফ মাদবরকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়। ১৬ নভেম্বর সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত নজরুল মাদবরের মৃত্যু হয়।