শরীয়তপুর টাইমস্ ডেস্ক :
শরীয়তপুরের জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আল আমিনের মৃত্যু নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তিঁনি আত্মহত্যা করেছেন না অন্য কোন বিষয় রয়েছে তা এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। স্থানীয়রা ওসির আত্মহত্যার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। তিঁনি থানায় যোগদানের অল্প দিনেই আন্তরিকতার মাধ্যমে জয় করে নেন স্থানীয়দের মন। তবে জেলা পুলিশ জানিয়েছে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে তিঁনি আত্মহত্যা করেছেন।
বৃহস্পতিবার(৯ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১টার দিকে থানার ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা দেখতে পান ওসির শয়নকক্ষের জানালার সঙ্গে তাঁর মরদেহ ঝুলছে। এসময় তাঁর দু পা পাশেই একটি চেয়ারে রাখা অবস্থায় ছিল ও শয়নকক্ষের দরজা খোলা ছিল। পরে ঢাকা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) একটি অপরাধ বিশ্লেষণ দল এসে সুরতহাল শেষ করে সন্ধ্যার পর অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ বলছে তার শয়নকক্ষে মানসিক অবসাদ নিবারণের ঔষধ পাওয়া গিয়েছে। তবে স্বজনরা বলছেন তিনি পারিবারিক ভাবে এমন কোন সমস্যায় ছিলেন না যাতে তিনি এধরণের পদক্ষেপ নিতে পারেন।
নিহত ওসি আল-আমিন বরিশাল জেলার মুলাদি উপজেলার কাচ্চির গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে।
জাজিরা থানা সূত্রে জানা যায়, আল–আমিন ২০০৭ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। গেল বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিঁনি বরিশালের একটি স্থনীয় ফাঁড়ির ইনচার্জ(আইসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জাজিরা থানায় প্রায় চার মাস যাবত ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন তিঁনি। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি থানায় তাঁর কার্যালয়ে না এলে ওই থানার এক কনস্টেবল বেলা ১১টার দিকে তাঁকে ফোন করে কিছু জরুরি নথিতে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলেন। তখন ফোন ধরে ওসি আল–আমিন পরে স্বাক্ষর করবেন বলে ওই পুলিশ সদস্যকে জানিয়ে ফোন রেখে দেন। এর দুই ঘণ্টা পর তিনি তাঁর কার্যালয়ে না আসায় থানার পরিদর্শক(তদন্ত) আবদুস সালাম দ্বিতীয় তলায় ওসির কক্ষে যান। তখন কক্ষের দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে জানালার গ্রিলের সঙ্গে ওসির ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। পরে জেলা পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করা হয়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জাজিরা থানায় যান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) একটি অপরাধ বিশ্লেষণ দল এসে মরদেহের সুরতহালের কার্যক্রম শুরু করে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর মরদেহ নিয়ে সন্ধা পৌনে ৭টার দিকে এম্বুলেন্সযোগে থানা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
ওসির মৃত্যুর খবর প্রকাশ পাওয়ার পর জাজিরা থানায় সর্বসাধারণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরীফ উজ জামান। তিনি বলেন, 'ওসি আল–আমিন বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে যাননি। তখন থানার কেউ কেউ তাঁকে ফোন করেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত থানার সদস্যদের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। এরপর বেলা সোয়া একটার দিকে আমাদের এক কর্মকর্তা তাঁর কক্ষে গিয়ে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। তখন কক্ষের দরজা খোলা ছিল। আমরা জেনেছি, আল–আমিন কোনো একটি বিষয় নিয়ে হতাশায় ভুগতেন। তিনি থানা ভবনের যে কক্ষে থাকতেন, সেই কক্ষে আমরা কিছু ওষুধ পেয়েছি, যা হতাশা কাটানোর জন্য খাওয়া হয়। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি তিনি আত্মহত্যা করেছেন। বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে যেকোনো সময়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।'
স্থানীয় সাইদুর চৌকিদার বলেন, 'ওসি সাহেব অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো নয়। বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার আসল রহস্য উন্মোচনের দাবি জানাই।'
জাজিরা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. পলাশ খান বলেন,"ওসি আল আমিন জাজিরা থানায় যোগদানের পর খুব সুশৃঙ্খলভাবে থানার কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। তিনি অত্যন্ত আন্তরিক ও নিয়মতান্ত্রিক লোক ছিলেন। তার এমন মৃত্যু কাম্য নয়। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটন করে জাতির সামনে তুলে ধরার দাবী জানাই।"
নিহত ওসি আল আমিনের বড় ভায়রাভাই(স্ত্রীর বড় বোনের স্বামী) আব্দুর রব বাবুল বলেন, "আমাদের থানা থেকে জানানো হয়েছিল তিনি অসুস্থ। এরপর আমরা আসার পর বেশ কিছুক্ষণ আমাদের তাকে দেখতে দেওয়া হয়নি।"
তিনি আরো জানান, আল আমিনের স্ত্রী ও ১২ বছর বয়সী দুই মেয়ে রয়েছে। তারা ঢাকায় বসবাস করেন। দুই মেয়ে ঢাকার ভিকারুননিসা নুন স্কুলে পড়াশোনা করছে। আল আমিন লাইফ লিড করতো খুব নরমাল। তার কিছুটা দেনা-পাওয়া ছিল। সংসার চালাতে কষ্ট হতো। কিন্তু এসব কারনে তার এমন পদক্ষেপ নেয়ার কথা নয়। এছাড়া পরিবারে কোন অশান্তি ছিলনা।
শরীয়তপুর পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেন, "ওসি আল–আমিনের গলায় গামছা প্যাঁচানো ছিল। তার শরীরে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।"
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার(এসপি) নজরুল ইসলাম বলেন, "ঘটনাপ্রবাহ ও অন্যান্য বিষয় দেখে মনে হচ্ছে, আল–আমিন আত্মহত্যা করেছেন। তারপরেও অধিকতর তদন্ত করা হবে। আল–আমিনের মরদেহ সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অধীনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হবে।"