সোমবার, ০৮ মার্চ ২০২১, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
টাইমস রিপোর্ট ॥ এ যেন দায়িত্ববোধ ও মহানুভবতার জলন্ত দৃষ্টান্ত! ডুবন্ত যাত্রীদের উদ্ধারে পানিতে নেমে প্রশংসিত হলেন ডামুড্যা থানার ওসি মেহেদী হাসান। যাত্রীবাহী বাস পুকুরে উল্টে পড়ে গেছে। দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে চারিদিক থেকে লোকজন এসে ভীড় জমাচ্ছে। অনেকেই চেয়ে চেয়ে দেখছে পানিতে ডুবে থাকা যাত্রীবাহী বাসের সে করুণ দৃশ্য। কেউবা মোবাইলে সে দৃশ্য ধারণ করছে। দুর্ঘটনা কবলিত বাসের যাত্রীরা যে যার মতো করে জীবন বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ডামুড্যা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মেহেদী হাসান। উপস্থিত লোকজন বলা-বলি করছে, পানিতে ডুবে থাকা বাসের ভিতরে লোকজন বা শিশু থাকতে পারে। আর দেরি নয়। তাৎক্ষণিক পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ডামুড্যা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান নিজেই। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত জনতা হতবাক। তার সাথে অন্যরাও পানিতে নেমে পড়েন। শুরু করেন যে যার মতো করে উদ্ধার কাজ। উপস্থিত লোকজন ওসি মেহেদী হাসানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তার এ উদ্ধার অভিযানের ভিডিওসহ ছবি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মুহুর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হয়ে যায় ওসির পানিতে নেমে বাস উদ্ধার চেষ্টার সে সারাজাগানো দৃশ্য। ওসি মেহেদী হাসান বলেন, বাসের ভিতরে লোক থাকতে পারে উপস্থিত লোকজনের মুখে এমন বক্তব্য শুনে নিজ দায়িত্ববোধ থেকেই আমি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ি এবং সহকর্মী ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজ চালাই। জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ১২ থেকে ১৫ জনকে পানির নিচ থেকে উদ্ধার করেছেন তিনি। যাত্রীদের উদ্ধারের কয়েকটি ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই তার ভূয়সী প্রশংসা করছেন। তাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। পরবর্তীতে স্থানীয়রাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। সংবাদ পেয়ে একে একে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের, পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেনসহ অন্য কর্মকর্তারাও। এ সময় কামরুজ্জামান মুন্সী (৪৫) ও ইয়াকুব পাইককে (৮০) উদ্ধার করা গেলেও বাঁচানো যায়নি। উদ্ধার কাজে অংশ গ্রহণ করতে এসে স্ট্রোক করে নিজেই লাশ হয়েছেন জুলহাস নামের এক যুবক। এ দুর্ঘটনায় আহত হন ছয় নারীসহ অন্তত ২০ জন যাত্রী। স্থানীয়রা জানান, উপস্থিত লোকজন যখন দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিলেন তখন ডামুড্যা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মেহেদী হাসান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ময়লা পানিতে লাফিয়ে পড়েন। তার লাফিয়ে পড়া দেখে স্থানীয় লোকজনও লাফিয়ে পড়েন। গাড়ির জানালার কাচগুলো ভেঙে দেন। যাতে সহজে গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীরা বেরিয়ে আসতে পারেন। গাড়ির ভেতরে আটকা পড়া ছয় নারীসহ ১২ থেকে ১৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেন ওসি নিজেই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক জনপ্রতিনিধি বলেন,
দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ওসি মেহেদী হাসান যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে যাত্রীদের উদ্ধার করেছেন তা অবিশ্বাস্য। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ময়লা পানিতে নামেন তিনি। এ বীরত্বের জন্য উপস্থিত হাজারো মানুষ তাকে এবং পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
জানা গেছে, যশোর জেলার কোতয়ালী থানাধীন বেজপাড়া গ্রাম নিবাসী মোঃ মেহেদী হাসান ১৯৯৬ সালে পুলিশ প্রশাসনে চাকুরিতে যোগদান করেন। ইতিপূর্বে তিনি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানা ও মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি ও সিরাজদি খান থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ভালো কাজের জন্য ডি.আই.জি ও এস.পি কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছেন। বিশেষ করে ডাকাতি ও খুনের মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসামী গ্রেপ্তার ও কবর থেকে লাশ উত্তোলনসহ সেবামূলক কাজ করে ভূয়সী প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকাল সোয়া ৯টার দিকে ডামুড্যা-শরীয়তপুর সড়কের ডামুড্যা উপজেলার খেজুরতলা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী বড় একটি পুকুরে পড়ে যায়। বাসটিতে ৪০/৪৫ জন যাত্রী ছিল।
Leave a Reply