সোমবার, ০৮ মার্চ ২০২১, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন
টাইমস রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশে যাঁরা ভাষা সৈনিকরূপে খ্যাত শরীয়তপুরের কৃতি সন্তান ডাঃ গোলাম মাওলাও তাঁদের একজন। ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভ’মিকা ছিল ডাঃ গোলাম মাওলার। ১৯৫২ সালের বিখ্যাত ভাষা আন্দোলনে তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বেই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রগণ সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। ডাঃ গোলাম মাওলা ভাষা আন্দোলনের সময় সর্বদলীয় ছাত্র সংসদের আহবায়ক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সংসদের (১৯৫১-৫২) সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৬ সালে উপ-নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টোর প্রার্থীরূপে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে সর্বমহলে সমাদৃত ছিলেন। তিনি তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং পূর্ব পাকিস্তান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ছিলেন। তাঁর ডাকেই সারা দিয়ে শরীয়তপুরে শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন। জেলায় নির্মাণ করা হয়েছিল প্রথম শহীদ মিনার। ডাঃ গোলাম মাওলার নেতৃত্বে যখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়, তখন তার আহবানে উজ্জীবিত হয়ে শরীয়তপুরের ছাত্ররাও ভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। পাকিস্তান সরকার যখন ভাষার উপর অত্যাচার শুরু করেন তখন ডাঃ গোলাম মাওলা সংগঠন করে আন্দোলন শুরু করেন। এর প্রভাব পড়ে শরীয়তপুরেও। শরীয়তপুরের পালং তুলাসার গুরুদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র জালাল উদ্দীন আহমেদ এবং আলী আহাম্মদ মিয়াসহ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা তখন মিছিল মিটিং করে বাংলা ভাষার দাবীতে আন্দোলন চালায়। ১৯৫৩ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি কলাগাছের শহীদ মিনার বানিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা প্রতি শ্রদ্ধা জানান তারা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৮ সালে উক্ত বিদ্যালয় মাঠে ইট বালু দিয়ে নির্মাণ করা হয় জেলার প্রথম শহীদ মিনার। এখন জেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার রয়েছে। শরীয়তপুরের ভাষা সৈনিক জালাল উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক আলী আহাম্মদ বলেন, ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা আমাদের শরীয়তপুরের গর্ব। তাঁর নেতৃত্বে যখন ভাষা আন্দোলন মেডিক্যাল কলেজে চলে, যখন ঢাকাতে চলে, ঐ প্রতিবাদ শুনে আমরা শরীয়তপুরের ছাত্ররা উজ্জীবিত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে শরীয়তপুরে আন্দোলন করেছি। মিছিল মিটিং করে, পোস্টার লিখে বিভিন্ন জায়গায় ছড়াতাম। তাঁরা বলেন, ভাষা আন্দোলনে ডাঃ গোলাম মাওলার অবদান চিরস্মরণীয়।
ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা ১৯২০ সালে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের পোড়াগাছা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব আব্দুল গফুর ঢালী। শরীয়তপুরের নড়িয়া বিহারী লাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করার পর তিনি ঢাকা জগন্নাথ কলেজে পড়াশুনা করেন। পরে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.এস.সি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। শরীয়তপুরবাসী ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলার জন্য গর্বিত। বিখ্যাত এই ভাষা সৈনিকের নামে শরীয়তপুরে দু/একটি স্থাপনা ছাড়া আর কোন স্মৃতি চোখে পড়ে না। শরীয়তপুর সদরে রয়েছে ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা গণগ্রান্থাগার। তার বাড়ির নিকট ডাঃ গোলাম মাওলা নামে একটি সড়ক ও একটি ব্রীজের নামকরণ করা হলেও সেগুলোর এখন বেহাল দশা। এছাড়াও ডাঃ গোলাম মাওলার নামে ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি ও মাদারীপুরে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলার নড়িয়া উপজেলার পোড়াগাছার গ্রামের বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ এবং ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা স্মৃতি পাঠাগার থাকলেও তা খুবই জরাজীর্ণ। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য একটি ম্যুরালসহ তার নামে স্থাপনা নির্মাণের দাবি তার পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর। তাঁর ছেলে ডাঃ গোলাম ফারুক বলেন, নিজ জেলা শরীয়তপুরে ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলার ম্যুরাল স্থাপন করা হলে আগামী প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারবে। দেশ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা ১৯৬৭ সালের ২৯ মে অল্প বয়সে চর্মরোগের কারণে ইন্তেকাল করেন।
Leave a Reply