শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
টাইমস ডেস্ক ॥ সুন্নাতে খাৎনা হয়নি এমন মুসলমান পুরুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। আর বাংলাদেশেতো একশতে একশ’। শরীয়তপুরে লোকজ চিকিৎসা হিসাবে সুন্নাতে খাৎনা অতি প্রাচীন চিকিৎসা হিসাবে পরিচিত। যা অদ্যাবধি চলে আসছে। গ্রামবাংলার মানুষ অতি প্রাচীন কাল থেকেই অশিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিত গ্রাম্য হাজাম (চিকিৎসক) দ্বারা সুন্নাতে খাৎনা করে আসছে । বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের ছেলে শিশুদের সুন্নাতে খাৎনার কাজ সম্পন্ন করা হলেও মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারে এখনও সেই পুরানো পদ্ধতির মাধ্যমে হাজাম দ্বারা শিশুদের সুন্নাতে খাৎনার কাজ করানো হয়। তবে বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে হাজামদের দ্বারা সুন্নাতে খাৎনার কাজ ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার পশ্চিম কোটাপাড়া গ্রামের মৃত আকুবালী হাজামের পুত্র হাতেম আলী হাজাম গত ৪০ বছর ধরে একটানা সুন্নাতে খাৎনার কাজ সম্পন্ন করে আসছেন। হাতেম আলী হাজাম জানান, গত ৪০ বছর ধরে তিনি ছেলে শিশুদের সুন্নাতে খাৎনার চিকিৎসা করে আসছেন। তারা পিতা মৃত- আকুবালী হাজামও একই পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। পৈত্রিক পেশা হিসাবে হাতেম আলী হাজাম এই লোকজ চিকিৎসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। হাতেম আলী হাজাম জানান, আগে প্রতিদিন ৭/৮ টা সুন্নাতে খাৎনার চিকিৎসা দেয়া হতো। এতে তার প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার হতো। কিন্তু এখন উন্নত চিকিৎসার কারণে মানুষ হাজাম দ্বারা সুন্নাতে খাৎনার কাজ কম করান। এখন মাসে দুই চারটা সুন্নাতে খাতনার চিকিৎসা করান তিনি। এতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় হলেও এই পেশার উপর নির্ভর করে তার এখন আর সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে তিনি অন্য কাজ কর্ম করে থাকেন।
হাতেম আলী হাজাম আরো জানান, সুন্নাতে খাৎনার চিকিৎসায় কিছু নিয়মনীতি আছে। যেই ছেলের সুন্নাতে খাৎনা করানো হয় সেই সময় ছেলের মা অথবা খালা বা চাচি একটি মাটির পত্রে পানির মধ্যে চুল ভিজিয়ে রাখবে। এ সময় ঐ ছেলের আত্মীয়-স্বজন চুল ভিজানো পানির পাত্রে কাচাঁ পয়সা ফেলবে এবং ছেলের জন্য দোয়া করবে যেন ব্যথা না পায়। সুন্নাতে খাৎনার জন্য বাজার থেকে নতুন লুঙ্গি ও গামছা কিনে আনতে হয়। সুন্নাতে খাৎনা করানোর পর তাকে কমপক্ষে ৩ দিন পযর্ন্ত ঐ গামছা পরিধান করে থাকতে হয়। এরপর ঘা শুকানোর পর তাকে গোছল দিয়ে নতুন লুঙ্গি পড়ানো হয়। যারা একটু ধনী মানুষ তারা হাজামের জন্যও একটি নতুন গামছা ও নতুন লুঙ্গী কিনে আনে। আর চুল ভিজানোর পানির পাত্রে যে কাঁচা টাকা ফেলা হয় তা সবই হাজামের প্রাপ্য টাকা। হাজামের চিকিৎসা ফি, নতুন লুঙ্গী ও গামছা এবং চুল ভিজানোর পানির পাত্রের জমা টাকা সবই নিয়ে থাকে। হাজাম জানান, এই চিকিৎসা ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করেছে। এক সময় জেলার ৬ টি উপজেলায় ২০০ থেকে ২৫০ জন হাজাম থাকলেও এখন এই পেশার লোক চখে পড়ে না। তারপরও এই লোকজ চিকিৎসাটি সমাজ থেকে উঠে যায়নি। সুন্নাতে খাৎনাকে গ্রামের মানুষ মুসলমানি করাও বলে থাকে। যে সকল ছেলেদের বয়স ৩ থেকে ১২ বছর পযর্ন্ত এমন ছেলেদেরই মুসলমানি কাজ করানো হয় বেশী। তবে এর কম বয়স ও বেশী বয়স ছেলেদেরও দুই একটা জুটেনা তা না। অনেক সময় বেশী বয়সী ছেলেদের মশারী খাটিয়েও সুন্নাতে খাৎনার চিকিৎসা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। সুন্নাতে খাৎনার কাজ শেষে রক্ত থামানোর জন্য অনেক সময় কাপড় অর্ধ পোড়া করে তা পেচিয়ে দিয়ে থাকেন বলে জানান। এতে করে ঘা তারাতারি শুকায়। পড়ে ঘা শুকানো শেষে গরম পানিতে ভিজিয়ে পোড়া কাপড় তুলে ফেলতে হয়। কোন কোন সময় ব্যথার ট্যাবলেটও সাথে রাখতে হয়।
Leave a Reply